নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি যেনে নিন
নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি এ গুলো নিয়ে আজকে আরোচনা করবো।নামাজ মনকে শান্ত রাখে,নামাজ এর কারনে রিজিক বাড়ে নামাজের অনেক উপকারিতা আছে,এই যদি সঠিক ভাবে পরা না হয় তাহলে নামাজ কবুল হবে না।
এই পোষ্টটি মনোযোগ দিয়ে পরলে নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি এবং কারণ গুলো কি কি জানতে পারবেন।আপনাদের অনেক উপেকারে আসবে চলুন যেনে নেই নামাজ ভঙ্গের কারণ গুলো:
আরো পড়ুন : শবে মেরাজ ও শবে বরাতের আমল যেনে নিন
পোস্টসূচীপত্র:নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি যেনে নিন
নামাজ ভঙ্গের কারণ
যে সকল কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়,এবং পুনরায় নামাজ পড়তে হয়,সে সকল বিষয় নিম্নে দেওয়া হল:
- ভুল করে বা ইচ্ছা করে কথা বললে।
- নামাজ পড়া অবস্থায় সালাম দেওয়া বা সালামের উত্তর দিলে।
- কেউ হাঁচি দিলে উত্তরে ইয়ারহামুকুল্লাহ বললে,তবে নামাজে নিজের হাঁচি আসলে ভুল করে আলহামদুলিল্লাহ বললে নামাজ হয়ে যায়,কিন্তু ইচ্ছা করে বললে নামাজ ভঙ্গ হয়।
- নামাজের বাহিরে কেউ দোয়া পড়লে তার উত্তরে আমিন বললে নামাজ ভঙ্গ হয়।
- নামাজরত অবস্থায় কোন দুঃসংবাদ শুনে ইন্নালিল্লাহ বললে।
- কোন প্রকার সু সংবাদ শুনে আলহামদুলিল্লাহ বা অন্য কিছু বললে।
- আশ্চর্যজনক কোন কথা শুনে সুবহানাল্লাহ অথবা অন্য কোন বাক্য উচ্চারণ করলে।
- উহ্-আহ্ শব্দ করলে এবং উচ্চস্বরে ক্রন্দন করলে।
- নামাজে থাকাকালীন অবস্থায় নামাজের বাইরে কোন ব্যক্তি কুরআন পাঠে তার লোকমা দিলে।
- নামাজের মধ্যে দেখে কুরআন পাঠ করলে।
- কোন পুস্তক অথবা লিখিত বস্তু দেখে পাঠ করলে, তবে মনে মনে লিখিত বস্তুর মর্ম বুঝে নিলে করে নামাজ ভঙ্গ হয় না।তবে এরকম কাজ করা ঠিক নয়।
- “আমলে কাছীর’ করা অর্থাৎ এমন কোন কাজ করা যা অন্য লোক দেখলে নামাজে মনে করবে না। যেমন: দুই হাত দিয়ে শরীর চুলকানো অথবা পরিধানের কাপড় দুই হাত দিয়ে ঠিক করা।
- বিনা প্রয়োজনে জুড়ে কাশি দেওয়া অথবা গলা পরিষ্কার করা।তবে ইমাম গলার আওয়াজ পরিষ্কার করার জন্য কাশি দিতে পারেন।
- ইচ্ছা করে অথবা ভুল করে কোন বস্তু খাওয়া বা পান করা।
- কোরআন পাঠে বিশেষভাবে কোন উচ্চারণ বিকৃত হওয়া ও ভুল পড়া।
- নামাজের ভেতর হাঁটলে।তবে প্রয়োজনে দুই এক কদম সামনে পিছনে সরা যেতে পারে।সেজদার জায়গা হতে আগে বেড়ে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়।
- কিবলার দিক থেকে অন্যদিকে সিনা ফিরানো।কোন কারণ ব্যতীত মুখ ফিরিয়ে নিলেও নামা মাকরুহ্ হয়ে যাবে।
- এক চতুর্থাংশ ছতর খুলে রাখা যতক্ষণে তিনবার সুবহানাল্লাহ বলা যায়।
- আল্লাহ তায়ালার নিকট এমন বস্তু চাওয়া যা মানুষের নিকট চাওয়া যায়।যেমন:পানাহার করার জন্য পানি চাওয়া।
- আল্লাহু এবং আকবার শব্দের আলিফ বা আকবার শব্দের বা-কে লম্বা করা।
- জানাযার নামাজ ব্যতীত অন্য নামাযে অট্টহাসি হাসলে।
- ইমামের আগে রুকু অথবা সেজদা করে নিলে।
- একই নামাজে নারী-পুরুষের একত্রে দন্ডায়মান হওয়া,আর এই দাঁড়ানো এতটুকু বিলম্ব হওয়া যার মধ্যে একবার সেজদা করা যেতে পারে।
- পূর্ণ সেজদার মধ্যে উভয় পা যদি মোটেই মাটিতে না লাগানো হয়।তবে পা উঠে গেলে আবার মাটিতে রাখলে অসুবিধা নেই।
- নামাজের মধ্যে সন্তান দুধ পান করলে।তবে দুধ বের না হলে নামাজ ভাঙবে না,কিন্তু তিন বা ততোদিক বার টানলে দুধ বের না হলেও নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
- স্ত্রী নামাজে থাকা অবস্থায় স্বামী তাকে চুম্বন করলে।
নামাজের মাকরুহ সময়
- যে সমস্ত কাজ দ্বারা নামাজ ভঙ্গ হয়না তবে তা দোষণীয়,সেই সকল কাজগুলোর নিম্নরূপ।
- শরীরে চাদর না জড়িয়ে উভয় কাঁদে লটকিয়ে ছেড়ে দেওয়া অথবা জামা কিংবা শেরওয়ানির হাতায় হাত না ঢুকিয়ে কাধে নিক্ষেপ করা।
- কাপড় অথবা কপালে ধুলাবালি লাগার ভয়ে কাপড় টেনে ধরা অথবা ফু দিয়ে ধুলাবালি সরানো। সেজদার জায়গায় পাথর কণা থাকলে হাত দিয়ে প্রয়োজনে দুই একবার সরালে কোন দোষ নেই।
- নিজের শরীর,কাপড় অথবা দাঁড়ি নিয়ে খেলা করলে। বহু লোক এরূপ কাজ করে থাকে,এ সকল থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য।
- এমন কাপড় পড়ে নামাজ পড়া যে কাপড় বাজারে অথবা সভা-সমিতিতে যাওয়া অপছন্দনীয় বোধ হয়।
- মুখে এমন জিনিস রেখে নামাজ পড়া যা রাখার ফলে কুরআন পাঠ করতে অসুবিধা হয়।
- অমনোযোগিতা অবস্থায় মাথা খালি রাখা,নাভির উপরে খোলা রাখা, খোলা দেহে নামাজ পড়া।কেউ যদি বিনয়ের কারণে এসকল অবস্থায় নামাজ পড়ে থাকে তাহলে তা মাকরুহ হবে না। তবে মসজিদের মধ্যে এরূপ কাজ করা ঠিক নয়,তবে ঘরের মধ্যে করা যায়।মসজিদে এরূপ কাজ করলে অন্য লোকের মনে এ সকল কাজের গুরুত্ব কমে যাবে।
- আঙ্গুল মটকানো অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল আরেক হাতের আঙ্গুলে ঢুকিয়ে দেওয়া।
- বিনা প্রয়োজনে কোমরের কাপড়ে হাত ঢুকিয়ে দেওয়া কিংবা বিনা প্রয়োজনে কোমরে হাত দেওয়া।
- সেজদায় দুই হাত কনুই পর্যন্ত বিছিয়ে দেওয়া।
- এদিকে-সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা।
- এমন লোকের দিকে মুখ করে নামাজ পড়া,যে লোক তার দিকে মুখ করে আছে বা এমন স্থানে নামাজ পড়া যেখানে কেউ হাসিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
- হাত অথবা মাথা দ্বারা ইশারা করে কারো কথার উত্তর দেওয়া।
- কোন অসুবিধা ছাড়া হামাগুড়ি দিয়ে বসা বা দুই পাকারা রেখে বসা বা আসন ছেড়ে বসা।কোন ওজর থাকলে যেরকম সম্ভব বসা চলে।
- ইচ্ছা করে হাই তোলা অথবা হাই বন্ধ করার চেষ্টা না করা।
- সামনের কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও একাকির পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া।
- কোন প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়া।
- প্রথম রাকাত অপেক্ষা দ্বিতীয় রাকাতের কিরাত তিন আয়াত বা ততোধিক পরিমাণ লম্বা করা।
- ইমামের পক্ষে একাকি কোন উঁচু স্থানে দাঁড়ানো।তবে এক বিঘত পরিমান পর্যন্ত উঁচুতে দাঁড়ালে কোন ক্ষতি নেই।
- এমনভাবে চাদর জড়িয়ে নামাজ পড়া,যাতে হাত বের করতে অসুবিধা হয়।
- অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মোচড়ানো।
- টুপি,পাগড়ি অথবা রুমালের ভাজে সেজদা করা।অর্থাৎ এগুলো পরিধান করার পর সেজদার জন্য কপালের কিছু অংশ খোলা রাখতে হবে।
- কোন নামাজে বিশেষ সূরা নির্দিষ্ট করে সব সময় সেটা পড়া।
- পবিত্র কুরআনের সূরা গুলো যে তারতীবে অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে লেখা হয়েছে-এর ব্যতিক্রমে পাঠ করা।
- পেশাব-পায়খানার জোর অনুভূতি হওয়া সত্বেও সে অবস্থায় নামাজ পড়া।
- খুব ক্ষুদা অনুভব হলে এবং খাবার তৈরি থাকলে না খেয়ে নামাজ পড়া।
- নামাজরত অবস্থায় ছারপোকা,মাছি ও পিঁপড়া মারা।তবে ছারপোকা অথবা পিঁপড়ায় কামড় দিলে তা ধরে ছেড়ে বা সরিয়ে দেওয়া যায়।কামড় না দিলে ধরা মাকরুহ হবে।
- কনুই পর্যন্ত জামা ইত্যাদির হাতা গুটিয়ে নামাজ পড়া মাকরুহ।জামা যদি এমনিতেই হাতা কাটা হয়,যেমন: শার্ট-তাহলে তা পরিধান করে নামাজ পড়া খেলাফে আওলা বা অনুত্তম।
যেসব অবস্থায় নামাজ ছেড়ে দেয়া যায়
- কোন কোন অবস্থায় নামাজ ছেড়ে না দিলে কবিরা গুনাহ হয়।আবার কোন কোন অবস্থায় নামাজ ছেড়ে না দিলে সামান্য গুনাহ হয়।
- কোন অনিষ্ঠকারী প্রাণীর ভয় থাকলে।অর্থাৎ কোন বিষাক্ত প্রাণী ধারা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে সেই অবস্থায় নামাজ ভঙ্গ করা যায়।
- যদি এমন কোন বস্তুর ক্ষতির আশঙ্কা থাকে যার মূল্য অন্তত সাড়ে ৪ রত্তি রুপার সমান হয়,যেমন-চুলায় কোন পাতিল জ্বলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এবং তার মূল্য যদি উক্ত পরিমান অথবা তার চেয়ে অধিক হয়ে থাকে তাহলে নামাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে।
- নামাজরত অবস্থায় যানবাহন ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকলে,অর্থাৎ গাড়িতে আসবাবপত্র ও শিশু-সন্তান থাকলে বা গাড়ি চলে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে নামাজ ছেড়ে দিতে পারবে।
- নামাজরত অবস্থায় পেশাব-পায়খানার চাপ অসহ্য মনে হলে।
- নামাজরত অবস্থায় কাউকে বিপদ বা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার প্রয়োজন হলে নামাজ ছেড়ে দেওয়া ফরজ।নামাজ ছেড়ে না দিলে সে ব্যক্তি কঠিন গুনাগার হবে।
- পিতা-মাতা,দাদা-দাদী,নানা-নানী কোন বিপদে পড়লে ডাকলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে তাদের কাজে যাওয়া কর্তব্য।যেমন:তাদের মধ্যে কেউ যদি হোচট খেয়ে পড়ে যায় অথবা আঘাত পেয়ে ডাক দেয় এমন অবস্থায় উদ্ধার করার জন্য কেউ না থাকলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করতে হবে।কিন্তু এদের মধ্যে কেউ যদি বিনা কারণে চিৎকার করে ডাকে,সে ক্ষেত্রে নামাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
লেখক এর মতামত
নামাজ সকল মুসলমানদের জন্য গুরুত্ত পূর্ণ।তাই আমরা যখন নামজ আদায় করবো সর্বচ্চ মনোযোগ দিয়ে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করবো।নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি এগুলো নিয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছেেএগুলো ছারাও আরো কারণ থাকতে পারে নামাজ ভঙ্গের,আলামেদের সাথে পরার্মশ করে ভিবিন্ন মাসালা যেনে নিবেন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url