রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো যেনে নিন

রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো নিয়ে আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো,রোজা ভঙ্গের ভিবিন্ন কারন আছে এই পোষ্টটি মনোযোগদিয়ে পরলে রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো জানতে পারবেন।রোজা রাখার অনেক উপকারিতা আছে।

রোজা-ভঙ্গের-কারণ

রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো মুসলিম দের সকলের জানা দরকার নিচে রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো আলোচনা করা হল:

আরো পড়ুন : শবে মেরাজ ও শবে বরাতের আমল যেনে নিন

পোস্টসূচীপত্র:রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো যেনে নিন

রোজা ভঙ্গের কারণ

যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হয় তা নিচে দেওয়া হল:

  • কানে বা নাকে ওষুধ দিলে।
  • ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে বা অল্প বমি আসার পর তা গিলে ফেললে।
  • কুলি করার সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে কণ্ঠনালীতে পানি চলে গেলে।
  • স্ত্রী বা অন্য কোন নারীকে শুধু স্পর্শ করার কারণে বীর্যপাত হয়ে গেলে।
  • এমন কোন জিনিস খেলে যা সাধারণত খাওয়া হয় না।যেমন: কাঠ, লোহা,কাগজ,পাথর,মাটি, কয়লা ইত্যাদি।
  • বিড়ি,সিগারেট বা হুক্কা সেবন করলে সেবন।
  • আগরবাতি প্রভৃতির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাকে পৌঁছালে।
  • ভুলে পানাহার করার পর রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে আবার পানাহার করলে।
  • রাত আছে মনে করে সুবহে সাদেকের পর সেহরি খেলে।
  • ইফতারির সময় হয়নি, অথচ ইফতারির সময় হয়ে গেছে মনে করে ইফতার করলে রোজা ভেঙে যায়।
  • দুপুরের পরে রোজার নিয়ত করলে।
  • দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হলে তা যদি থুথুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কণ্ঠনালীতে চলে যায় তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়।
  • কেউ জোরপূর্বক রোজাদারের মুখে কিছু দিলে এবং তা কণ্ঠনালীতে পৌঁছে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়।
  • দাঁতে কোন খাদ্যের টুকরা আটকে থাকলে সুবহে সাদেকের পর তা যদি পেটে চলে যায়, তবে সে টুকরো যদি ছোলা বুটের চেয়ে ছোট হয় তাহলে রোজা ভেঙে যায় না, তবে এরূপ করা মাকরুহ্ হবে। কিন্তু মুখ থেকে বের করার পর গিলে ফেললে তা যতই ছোট হোক না কেন রোজা কাজা করতে হবে।
  • হস্তমৈথুন করলে যদি বীর্যপাত হয়।
  • পেশাবের রাস্তায় বা স্ত্রীর  যোনীর পথে কোন ওষুধ প্রবেশ করালে।
  • পানি বা তেল ধারা ভেজা আঙ্গুলে যোনিতে  প্রবেশ করালে।
  • শুকনো আঙ্গুল যোনিতে প্রবেশ করিয়ে পুরোটা বা কিছুটা বের করে পুনরায় প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হয়। আর যদি শুকনো আঙ্গুল একবার প্রবেশ করিয়া একেবারে পুরোটা বের করে নেওয়া হয়-আবার প্রবেশ, তাহলে রোজার অসুবিধা।
  • মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে গেলে এবং এই অবস্থায় সুবহে সাদেক হয়ে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়।
  • নস্যি গ্রহণ করলে বা কানে তেল ঢাললে।
  • কেউ রোজার নিয়তই যদি না করে তাহলেও শুধু কাজা ওয়াজিব হয়।
  • স্ত্রীর বেহুশ থাকা অবস্থায় কিংবা বে খবর ঘুমন্ত অবস্থায় তার সাথে সহবাস করা হলে ঐ স্ত্রীর উপর শুধু কাজা ওয়াজিব হবে।
  • রমজান ব্যতীত অন্য নফল রোজা ভঙ্গ হলে শুধু কাজা ওয়াজিব হয়।
  • এক দেশে রোজা শুরু করার পর অন্য দেশে চলে গেলে সেখানে যদি নিজের দেশের তুলনায় আগে ঈদ হয়ে যায় তাহলে নিজের দেশের হিসেবে যে কয়টা রোজা বাদ গিয়েছে তা কাজা করতে হবে। আর যদি অন্য দেশে গিয়ে রোজা এক দুটো বেড়ে যায় তাহলে সেই রোজা গুলোও করতে হবে।

যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় এবং কাযা,কাফফারা উভয়টা ওয়াজিব হয়:

  • রোজার নিয়ত করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে পানি পান করলে।
  • রোজার নিয়ত করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সম্ভোগ করলে।স্ত্রীর উপরও কাযা কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে। স্ত্রীর যোনির মধ্যে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ প্রবেশ করালেই কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে, এতে বীর্যপাত হোক বা না হোক।
  • রোজার নিয়ত করার পর পাপ হয় জানা সত্ত্বেও পুরুষ যদি তার পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করায় এবং অগ্রভাগ ভিতরে প্রবেশ করে এতে বীর্যপাত হোক বা না হোক, তাহলেও পুরুষ এবং স্ত্রীর উভয়ের উপর কাযা এবং কাফফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে।
  • রোজা অবস্থায় কোন বৈধ কাজ করলে, যেমন-স্ত্রীকে চুম্বন দিলে কিংবা মাথায় তেল দিলে যদি এই মনে করে পানাহার করে যে তার রোজা ভেঙে গেছে তাহলেও তার উপর কাযা কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।

যেসব কারণে রোজা না রাখার অনুমতি আছে:

  • কেউ যদি শরীয়তসম্মত সফরের উদ্দেশ্যে থাকে তাহলে তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে এবং পরবর্তীতে তা কাজা করে নিতে হবে। কিন্তু সফরে যদি কোন কষ্ট না হয়, তাহলে রোজা রাখাই উত্তম। তবে কোন ব্যক্তি যদি রোজা রাখার নিয়ত করার পর সফরের উদ্দেশ্যে বের হয় তবে সেই দিনের রোজা ভাঙ্গা জায়েজ নয়, রাখা জরুরী।
  • কোন অসুস্থ ব্যক্তি যদি রোজা রাখার পর তার রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বা আশঙ্কা থাকে অথবা নতুন রোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে রোজা ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি আছে। তবে সুস্থ হওয়ার পর কাযা করে নিতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় রোজা ছাড়তে হলেও কোনো দ্বীনদার পরহেযগার চিকিৎসকের পরামর্শ থাকা শর্ত প্রযোজ্য, নতুবা নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে হতে হবে, শুধু নিজের কাল্পনিক খেয়ালের বশীভূত হয়ে আশঙ্কাবোধ করে রোজা ছাড়া দূরস্ত হবে না। তাহলে কাযা কাফফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে।
  • রোগ থেকে মুক্তির পর যে দুর্বলতা থাকে তখন রোজা রাখলে যদি পুনরায় রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে তাহলে সেই মুহূর্তে রোজা না রাখার অনুমতি আছে, পরে কাযা করে নিতে হবে।
  • গর্ভবতী বা দুগ্ধদায়িনী স্ত্রীলোক রোজা রাখলে যদি নিজের জীবনের ব্যাপারে বা সন্তানের জীবনের ব্যাপারে আশঙ্কা বোধ হয় বা রোজা রাখলে দুধ শুকিয়ে যাবে আর সন্তানের সমূহ কষ্ট হবে-এরুপ নিশ্চিত হয়, তাহলে সে মুহূর্তে রোজা ছাড়া জায়েয, পরে কাযা করে নিতে হবে।
  • হায়েয-নেফাস অবস্থায় রোজা ছেড়ে দিতে হবে এবং পরবর্তীতে পবিত্র হওয়ার পর কাযা করে নিতে হবে।

যেসব কারণে রোজা শুরু করার পর তা ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি রয়েছে:

  • যদি রোজা অবস্থায় পিপাসা বা ক্ষুদা লাগে যার ফলে প্রাণের আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে রোজা শুরু করার পর তা ভেঙে ফেলার অনুমতি আছে। পরবর্তীতে তা কাযা করে নিতে হবে।
  • রোজাদার ব্যক্তি যদি এমন কোন রোগ বা অবস্থা দেখা দেয় যে, ওষুধ গ্রহণ না করলে জীবনের আশা ত্যাগ করতে হয়, তাহলে রোজা শুরু করার পর তা ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি আছে।পরবর্তীতে তা কাযা করে নিতে হবে।
  • গর্ভবতী স্ত্রীলোকের যদি এমন অবস্থা হয় যে,নিজের বা সন্তানের প্রাণ নাশের আশঙ্কা হয়,তাহলে ঐ একই মাসআলা।
  • রোজা থাকা অবস্থায় বেহুশ শ বা পাগল হয়ে গেলেও অনুরুপ মাসআলা।

যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না এবং মাকরুহও হয় না:

  • মেসওয়াক করা।যেকোনো সময় হোক, তা কাঁচা হোক বা শুষ্ক।
  • শরীর, মাথা বা দাড়ি গোপে তেল লাগানো।
  • চোখে সুরমা লাগানো বা কোন ওষুধ দেওয়া।
  • খুশবো লাগানো বা তার ঘ্রাণ নেয়া।
  • ভুলে কিছু পান করা, আহার করা বা স্ত্রী সম্ভোগ করা।
  • গরম বা পিপাসার কারণে গোসল করা বা বারবার কুলি করা।
  • অনিচ্ছাবশত গলার মধ্যে ধোঁয়া, ধুলাবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা।
  • অনিচ্ছাবশত কানের ভেতর পানি চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয় না, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে দিলে সতর্কতা হলো যে রোজা কাযা করে নেয়া।
  • অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে। ইচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি করলে মাকরুহ হয় না, তবে এরূপ করা ঠিক না।
  • স্বপ্নদোষ হলে।
  • মুখে থুথু আসার পর গিলে ফেললে।
  • যে কোন ধরনের ইনজেকশন বা টিকা লাগালে। তবে কেউ যদি রোজা কষ্ট বোধ না হওয়ার জন্য-এই উদ্দেশ্যে শক্তির ইনজেকশন বা স্যালাইন লাগায় তবে তা মাকরুহ।
  • রোজা অবস্থায় দাঁত উঠালে এবং রক্ত পেটে না গেলে।
  • পাইরিয়া রোগের কারণে যে সামান্য রক্ত সব সময় বের হতে থাকে।
  • সাপ ইত্যাদিতে দংশন করলে।
  • পান খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করা সত্ত্বেও যদি থুতুতে লালভাব থেকে যায়।
  • শাহাওয়াতের সাথে শুধু নজর করার কারণেই যদি বীর্যপাত ঘটে যায় তাহলে রোজা ফাসেদ হয় না।
  • রোজা অবস্থায় শরীর থেকে ইঞ্জেকশনের সাহায্যে রক্ত বের করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। রক্ত দেওয়ার পর রোজা রাখার শক্তি চলে যাওয়ার মত দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকলেও মাকরুহও হয় না।

যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না তবে মাকরূহ হয়ে যায়:

  • বিনা প্রয়োজনে কোন জিনিস চিবালে।
  • তরকারি ইত্যাদির লবণ চেখে ফেলে দেয়া। তবে কোন চাকর এর মুনিব বা কোন নারীর স্বামী বদ-মেজাজী হলে জিহবার অগ্রভাগ দিয়ে লবণ চেখে তা ফেলে দিলে এতোটুকুর অবকাশ আছে।
  • কোনো ধরনের মাজন, কয়লা, গুল বা টুথপেস্ট ব্যবহার করা মাকরুহ। আর এর কোন কিছু সামান্য পরিমাণ গলার মধ্যে চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
  • গোসল ফরজ-এই অবস্থায় সারাদিন অতিবাহিত করলে।
  • কোনো রোগীর জন্য নিজের রক্ত দিলে।
  • গীবত করা, চুগলখোরী করা, অনর্থক কথাবার্তা বলা, মিথ্যা বললে।
  • ঝগড়া-ফ্যাসাদ করা, গালি-গালাজ করলে।
  • ক্ষুধা বা পিপাসার কারণে অস্থিরতা প্রকাশ করলে।
  • মুখে অধিক পরিমাণ থুথু একত্র করে তা গিলে ফেললে।
  • দাঁতে ছোলা বুটের চেয়ে ছোট কোন বস্তু আটকে থাকলে মুখের ভিতরে থাকা অবস্থায় তা গিলে ফেললে।
  • নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না-এরূপ মনে হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করলে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণের আস্থা থাকলে ক্ষতি নেই। তবে যুবকদের এরকম অবস্থা থেকে দূরে থাকাই উত্তম। আর রোজা অবস্থায় স্ত্রীর ঠোঁট মুখে নেয়া সর্বাবস্থায় মাকরুহ।
  • নিজের মুখ দিয়ে চিবিয়ে কোন বস্তু শিশুর মুখে দিলে। তবে অনন্যোপায় অবস্থায় এরুপ করলে অসুবিধা নেই।
  • পায়খানার রাস্তা পানি দিয়ে এতবার পরিষ্কার করা যে ভেতরের পানি চলে যাওয়ার সন্দেহ হয়ে যায়-এরূপ করা মাকরুহ। আর প্রকৃতপক্ষে পানি চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই এ সকল ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। এই জন্য রোজা অবস্থায় পানি দিয়ে ধৌত করার পর উচিত কোন কাপড় অথবা হাত দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলা, এটি নিয়ম।
  • ঠোঁটে লিপিস্টিক লাগানোর পর যদি তা মুখের ভেতরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তা মাকরুহ।

লেখক এর মতামত

রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো নিয়ে উপরে আলোচনা করা হল,এর বাহিরে ও যদি আরো রোজা ভঙ্গের কারণ থাকে তাহলে আপনারা আলেমদের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।রোজা শহান ’আল্লাহ’ তায়ালার সনষ্ঠুষ্টির জন্য রাখা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url