স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব গুলো কি কি যেনে নিন


স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব গুলো কি কি আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব কি কি এগুলো সম্পর্কে প্রত্যেকটি স্বামীর ধারণা থাকা দরকার।স্ত্রীর প্রতি ইসলামিক শরীয়া অনুযায়ী দায়িত্ব আছে,এ দায়িত্ব গুলো প্রত্যেক টি স্বামীর পালন করতে হবে।

স্ত্রীর

স্ত্রীর প্রতি কি কি দায়িত্ব এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।আপনারা যদি এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে ১০০% জানতে পারবেন স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব কি কি।নিচে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

পোস্টসূচীপত্র:স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব গুলো কি কি যেনে নিন

স্ত্রীর অধিকার সমূহ

হালাল ভাবে স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়া স্বামীর উপর ওয়াজিব।স্বামীর যতটুকু সামর্থ্য সে হিসেবে স্ত্রীকে পড়ার জন্য কাপড় এবং প্রত্যেক ঈদে নতুন পোষাক দেয়ার চেষ্টা করা।হাত খরচ হিসেবেও স্ত্রীকে কিছু টাকা দেওয়া, যাতে সে তার ছোটখাটো এমন সব প্রয়োজন পূরণ করতে পারে যা সব সময় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। তবে স্ত্রী অবাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে চলে গেলে তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামী নিতে বাধ্য নয়।

আরো পড়ুন : শবে মেরাজ ও শবে বরাতের আমল যেনে নিন

স্বামীর স্বচ্ছলতা থাকলে স্ত্রীর জন্য চাকর-নওকর এর ব্যবস্থা করে দেওয়া স্বামীর উপর ওয়াজিব।তবে স্বামীর স্বচ্ছলতা না থাকলে তখন স্ত্রীকেই রান্না-বান্না সহ বাড়ির সকল কাজ করা যা তার দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়।আর যদি স্ত্রী অসুস্থতার কারণে বা আমীর-উমরা প্রভৃতি বড় ঘরের কন্যা হওয়ার কারণে নিজে রান্না করতে না পারে,তাহলে স্বামীর দায়িত্ব প্রস্তুত খাবার কিনে আনা অথবা কারোর দ্বারা খাবার পাকানোর ব্যবস্থা করা।

স্ত্রীর বসবাসের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী পৃথক ঘর বা অন্তত পৃথক রুম পাওয়া স্ত্রীর অধিকার।স্ত্রী যদি পৃথক থাকার কথা বলে এবং স্বামীর মাতা-পিতা বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে একই ঘরে থাকতে রাজি না থাকে, তাহলে তার ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর ওয়াজিব।অন্তত একটি পৃথক রুম তাকে দিতে হবে।যেখানে সে তার জিনিসপত্র তালাবদ্ধ করে হেফাজতে রাখতে পারে

এবং একান্তভাবে স্বামীর সাথে মনোরঞ্জন করতে পারে।উল্লেখ্য,শশুর-শাশুড়ির খেদমত করা স্ত্রীর উপর আইনত ওয়াজিব নয়, তবে করলে ছওয়াবআছে।বরং এ খেদমতের দায়িত্ব স্বামীর,সে নিজে যদি করতে না পারে তাহলে লোক রেখে তাদের দিয়ে করাবে।তাও না পারলে একান্ত অনন্য পায় হয়ে পড়লে এ অবস্থায় স্ত্রীর মাধ্যমে করাতে চাইলে তখন স্ত্রীর সেটা করার দায়িত্ব এসে যায়। 

আরো পড়ুন : যাকাত দেওয়ার নিয়ম এবং যাকাতের মাসায়েল যেনে নিন

নতুবা স্বাভাবিক অবস্থায় স্ত্রী আন্তরিকভাবে না চাইলেও জবরদস্তি তাকে স্বামীর মাতা পিতার অধীন করে রাখা,জোর-জবরদস্তি করে মাতা-পিতার একান্নভুক্ত রাখা এবং জোর জবরদস্তি করে মাতা-পিতার খেদমত করানো উচিত নয়।এটি স্ত্রীর প্রতি জুলুম করা হবে।তবে সকল স্ত্রীদেরও মনে রাখা উচিত যে, একান্তই জরুরি দরকার না থাকলে স্বামীকে তার মাতা-পিতা ও ভাই-বোন থেকে পৃথক করে নিয়ে তাদের মনে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।

স্ত্রীর সাথে সদ্ব্যবহার করা

স্ত্রীর চরিত্রের ব্যাপারে অহেতুক সন্দেহ বা কু ধারণা না রাখা।তবে একেবারে অসতর্কও থাকা উচিত নয়।হায়েয নেফাস প্রভৃতির বিধান ও দ্বীনী মাসায়েল নিজে শিক্ষা করে স্ত্রীকে তা শিক্ষা দেয়া,নামায রোযা প্রভৃতি ইবাদত করা ও দ্বীনের উপর চলার জন্য স্ত্রীকে তাগিদ দেওয়া।এছাড়া বিদআত,রছম প্রভৃতি শরী্আতবিরোদ্ধ কাজ থেকে নিজ স্ত্রীকে দূরে রাখা স্বামীর কর্তব্য।

প্রয়োজন অনুপাতে স্ত্রীর সাথে সংগম করা।প্রতি চার মাসে অন্তত একবার স্ত্রীর সাথে যৌন সংগম করা স্বামীর উপর ওয়াজিব।স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত তার সাথে আযল না করা। অর্থাৎ, যৌন সংগমকালে যোনির বাহিরে বীর্যপাত না করা।

স্ত্রীর মাতা-পিতা,ভাই-বোন প্রভৃতি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনের সাথে তাকে দেখা সাক্ষাৎ করার অনুমতি প্রদান করা।তবে যাতায়াতের ভাড়া দেওয়া স্বামীর আইনগত কর্তব্য নয়।দিলে সেটা তার অনুগ্রহ বলে বিবেচিত হবে। মাতা-পিতার সঙ্গে সপ্তাহে একবার দেখা করতে চাইলেও দেখা করতে দিবে,অন্য মাহরাম আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে বৎসরে একবার। 

আরো পড়ুন : নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি যেনে নিন

তবে মাতা-পিতার সঙ্গে আসার সময় অথবা আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় যদি বেপর্দা হওয়ার বা অন্য কোন ফিতনার আশঙ্কা থাকে তাহলে এরূপ অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীকে বাধা দিতে পারবে।এ ক্ষেত্রে মাতা-পিতা এবং আত্মীয়-স্বজন এসে দেখে যাবে।তাতেও যদি কোনো অকল্যাণের আশঙ্কা থাকে তাহলে তাদেরকে স্ত্রীর কাছে আসতে না দেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে স্বামীর। সেরুপ ক্ষেত্রে তারা চাইলে দূর থেকে দেখে কথা বলে চলে যেতে পারে।

স্ত্রীর সঙ্গে কৃত যৌন সংগম প্রভৃতি গুপ্ত বিষয় কারো সাথে প্রকাশ না করা, এটিও স্ত্রীর অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে স্ত্রীকে সংশোধন মূলক কিছুটা প্রহার করার অনুমতি স্বামীকে দেয়া হয়েছে, তবে সে ক্ষেত্রে স্বামী সেমালংঘন করতে পারবে না।

বিনা কারণে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবেনা।স্ত্রীর যেনা,মিথ্যা বাতিল মতবাদের বিশ্বাসী,ফাসেকী প্রভৃতি কারণে তালাক দেয়া হলে স্বামীর অন্যায় হবে না।পক্ষান্তরে অনন্যোপায় অবস্থা ব্যতীত স্ত্রীরও স্বামীর কাছ থেকে তালাক চেয়ে নেওয়া অন্যায়।

স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য অন্তত কিছুক্ষণ নির্জনে স্ত্রীকে সময় দেওয়া।স্ত্রীর সাথে হাসি-ফুর্তি করা স্বামীর কর্তব্য।যাতে স্ত্রীও মনোরঞ্জন করতে পারে,মনের কথা বলতে পারে,সকল সুবিধা-অসুবিধা কথা জানাতে পারে এবং একাকিত্বের কষ্ট লাঘব করতে পারে।এরূপ ব্যবস্থা না থাকলে তার সমমনা কোন নারীকে তার নিকট আসা-যাওয়া বা রাখার ব্যবস্থা করবে।মোটকথা,ঘরে পর্দার মধ্যে থেকেও যেন স্ত্রী তার মনের খোরাক পায় তার জন্য শরীয়াতের গণ্ডির মধ্যে থেকে ব্যবস্থা করতে হবে।

  • রাত্রে স্ত্রীর সাথে শয়ন করাও স্ত্রীর অধিকার।
  • স্ত্রীদের মান-অভিমান করারও অধিকার রয়েছে।
  • স্ত্রীর ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা, যতক্ষণ না পর্যন্ত সীমালঙ্ঘনের পর্যায়ে না যায়।স্ত্রীর পক্ষ থেকে কষ্ট পেলে ছবর করা এবং নীরব থাকা।
  • স্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা বলা এবং তাকে খুশি রাখা স্বামীর কর্তব্য এবং এটি স্ত্রীর অধিকার।
  • মহর স্ত্রীর অধিকার।স্বামীর উপর মোহর প্রদান করা ফরজ। স্বামী মহর প্রদান করা ব্যতীত মারা গেলে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর মহর আদায় করা হবে।
  • স্ত্রীর প্রতি অবিচার না করা।পুরুষ তার কর্তৃত্ব সুলভ ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনোভাবেই স্ত্রীর উপর অন্যায় অবিচার ও জুলুম না করা।
  • একাধিক স্ত্রী থাকলে ভরণ-পোষণ,রাত্রিযাপন প্রভৃতি বিষয়ে স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা ওয়াজিব। তবে মনের টান স্ত্রীদের প্রতি কম বা বেশি থাকলে সেটার জন্য স্বামী দায়ী নয়,কেননা সেটা তার এখতিয়ারের বাহিরের বিষয়।

লেখক এর মতামত

দাম্পত্য জীবনকে শান্তিময় ও সুখময় করে তুলতে হলে শুধু নিজের অধিকার দেখলেই চলবে না।নিজের যে সকল দায়িত্ব এবং কর্তব্য আছে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।অতএব স্ত্রী যদি শুধু নিজের অধিকারের দিকে লক্ষ্য দেয়,স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব গুলোকে গুরুত্ব না দেয় এবং স্বামীর প্রতি যত্নবান না হয়,তাহলে সংসারে সুখ শান্তি আসবেনা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url