রোজার নিয়ত বাংলায় যেনে নিন

রমজানে রোজা রাখা প্রত্যেক এর জন্য ফরজ।আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো রোজার নিয়ত বাংলায় কিভাবে করবেন যারা আরবি পারেন না তারা রোজার নিয়ত বাংলায় করবেন এবং রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।

রোজার নিয়ত বাংলায়

ফরজ এবং নফল রোজার নিয়ে লোচনা করা হবে।নফল রোজার নিয়ত এবং ইফতারের দোয়া প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পরবেন অনেক রোজা সর্ম্পকে অনেক কিছু জানতে পারবেন।

পোস্টসূচীপত্র:রোজার নিয়ত বাংলায় যেনে নিন

রোজার নিয়ত করা কি ফরজ

রোজার নিয়ত করা কি ফরজ কাজ? রোজার নিয়ত মানুষ কেন করে।রোজার নিয়ত করা ফরজ কাজ।রোজার নিয়ত করার মধ্য দিয়ে আমরা আল্লাহর কাছে সংকল্প করি ঠিকভাবে রোজা পালন করার।নামাজ আদায় করার পূর্বে যেমন আমরা নিয়ত করি তেমনি রোজা রাখার পূর্বেও নিয়ত করা জরুরী।তবে রোজার নিয়ত মুখে বলা জরুরি নয়, বরং মনে মনে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যায়।

রোজার নিয়ত কখন করতে হয়

রোজার নিয়ত কখন করতে হয়,এ সম্পর্কেও একজন রোজাদার ব্যক্তি জ্ঞান থাকা দরকার।রোজার নিয়ত কখন করতে হয় এ সম্পর্কে যদি না জানে তাহলে হয়তো তার রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।রোজার নিয়ত কখন করতে হয় তার সঠিক তথ্য হলো-রোজার নিয়ত রাতের সময় করা উত্তম।কিন্তু কেউ যদি নিয়ত করতে ভুলে যায় তাহলে তাকে অবশ্যই অবশ্যই সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা পূর্বে নিয়ত করতে হবে।সূর্য ঢলার পরে কেউ নিয়ত করলে সেই রোজা সম্পূর্ণ হবে না।

রোজার নিয়ত বাংলায়

রোজা রাখার পূর্বে রাতের বেলায় সূর্য ঢলার পূর্বে রোজা রাখার নিয়ত করতে হবে।কেউ যদি নিয়ত আরবিতে না করে বাংলায় করতে চায় তাহলে সেটিও করতে পারবে।রোজার নিয়ত বাংলায় করলেও রোজার নিয়ত সম্পন্ন হবে এবং রোজা সম্পন্ন হবে।কেননা রোজার নিয়ত করার প্রধান উদ্দেশ্য মহান আল্লাহ তায়ালাকে আমাদের রোজার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানানো এবং তার কাছে নিজের মনের কথা প্রকাশ করা।তাই মুখে নিয়ত না করে মনে মনে নিয়ত করলেও রোজা সম্পন্ন হবে।

রোজা ভঙ্গের কারণ

রমজান মাসের রোজা আদায় করা মুসলমানদের জন্য ফরজ কাজ।তাই সকল মুসলমান ব্যক্তিদের উচিত রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।কেননা রোজা ভঙ্গ হলে পুনরায় তার কাযা রোজা আদায় করতে হবে।রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আরো পড়ুন : ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি যেনে নিন

১.রোজা থাকা অবস্থায় নাকে এবং কানে তরল জাতীয় কোন ওষুধ দিলে।
২.ইচ্ছাকৃতভাবে যদি কেউ বমি করে তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়।
৩.কেউ কুলি করলে অনিচ্ছাকৃত বশত মুখের ভিতর পানি চলে গেলে।
৪.কোন পুরুষ তার স্ত্রী অথবা অন্য কোন মহিলাকে স্পর্শ করার ফলে যদি বীর্যপাত হয়ে যায়।
৫.খাবার হিসেবে গণনা করা হয় না তবুও তা খেলে। যেমন-কাঠ,, লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা প্রভৃতি।
৬.ধুমপান করলে অর্থাৎ বিড়ি, সিগারেট বা হুক্কা সেবন করলে।
৭.আগরবাতির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের নাকে পৌঁছালে।
৮.ভুলবশত পানাহার করে যদি কেউ মনে করে রোজা ভেঙে গেছে এবং পুনরায় কিছু পানাহার করে তাহলে তার রোজা ভেঙে যাবে।
৯.রাতে আরো অধিক সময় আছে মনে করে সুবহে সাদেকের পরে সেহরি খেলে।
১০.ইফতারির সময় হয়ে গেছে মনে করে ইফতারির সময়ের আগে ইফতারি করলে।
১১.দুপুরের সময়ের পরে রোজার নিয়ত করলে।
১২.কোন দুর্ঘটনা বসত দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি তা থুথুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কন্ঠনালীর ভেতরে প্রবেশ করে।
১৩.কোন ব্যক্তি যদি রোজাদার ব্যক্তির মুখে জোরপূর্বক খাবার দেয় এবং তা কন্ঠনারলীর নিচে চলে যায় তাহলেও রোজা ভঙ্গ হয়।
১৪.দাঁতের ফাঁকায় কোন সামান্য পরিমাণ খাবার আটকে থাকে যদি তা দাঁত থেকে বের করে খেয়ে ফেলে তাহলে এতে রোজা ভঙ্গ হয় না, কিন্তু এইরূপ করা মাকরুহ। কিন্তু মুখ থেকে খাবার বের করে পুনরায় সেই খাবার খেয়ে ফেললে খাবার যত ছোটই হোক না কেন রোজা ভেঙে যাবে।
১৫.পুরুষেরা হস্তমৈথুন করলে যদি বীর্যপাত হয় তবে রোজা ভঙ্গ হয়।
১৬.প্রস্রাবের রাস্তায় অথবা স্ত্রীর যোনিতে কোন ঔষুধ প্রবেশ করাবে।
১৭.পানি বা তেল দিয়ে আঙ্গুল ভিজিয়ে সেই আঙ্গুল যোনিতে বা পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করালে।
১৮.শুকনা আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে আঙ্গুল ভিজে গেলে সেই ভেজা আঙ্গুল পুনরায় প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুকনা অবস্থায় রোজা ভঙ্গ হয় না।
১৯.মুখে পান রাখা অবস্থায় যদি সুবহে সাদেক হয়ে যায়।
২০.নস্যি গ্রহণ করলে এবং কানে তেল ঢাললে।
২১.কেউ যদি রোজার নিয়ত না করে তাহলে তার জন্য কাযা ওয়াজিব হয়।
২২.স্ত্রী বেহুশ থাকা অবস্থায় অথবা বে খবর ঘুমন্ত অবস্থায় যদি তার সাথে তার স্বামী সহবাস করে তাহলে ওই স্ত্রীর ওপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে।
২৩.রমজান ব্যতীত অন্যান্য নফল রোজা ভঙ্গ হলে তা শুধুমাত্র কাযা ওয়াজিব হবে।
২৪.এক দেশ থেকে রোজা শুরু করে অন্য কোন দেশে চলে গেলে যদি সেখানে নিজ দেশের তুলনায় ঈদ আগে হয়ে যায় তবে নিজের দেশের হিসাবে যে কয়েকটা রোজা ভাঙ্গা গেছে সেই রোজাগুলো কাযা করতে হবে। আর যদি অন্য দেশে গিয়ে রোজা দুই একটা বেড়ে যায় তাহলে সেই দুই একটা রোজাও রাখতে হবে।

নফল রোজার নিয়ত

রমজান মাসের কোন রোজা যদি ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে যায় তাহলে আমাদেরকে সেই ভাঙ্গা রোজার নফল রোজা আদায় করতে হয়।এবং এটি বাধ্যতামূলক।তবে যে কেউ চাইলে বছরের পাঁচটি দিন বাদে সারা বছরে যে কোন দিন নফল রোজা আদায় করতে পারে।

নফল রোজার নিয়ত বাংলায়

নফল রোজার নিয়ত কখন করতে হয়? বছরের পাঁচ দিন ব্যতীত সারা বছরের যে কোন দিন নফল রোজা রাখা যায়। উক্ত পাঁচটি দিন হলো-ঈদুল ফিতরের দিন,ঈদুল আযহার দিন,ঈদুল আযহার দিনের পরের তিন দিন।অর্থাৎ,১১,১২,১৩ ই যিলহজ্জ এই পাঁচ দিন যেকোন রোজা রাখা হারাম।

আরো পড়ুন : স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব গুলো কি কি যেনে নিন

যদি কোন ব্যক্তি প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখের নফল রোজা রাখে,সেই ব্যক্তি যেন সারা বছর রোজা রাখল।অর্থাৎ চন্দ্র মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখ রোজা রাখলে তা সারা বছরের রোজা রাখার সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়।এই রোজাকে আইয়্যামে বীযের রোজা বলে।

আমাদের প্রিয় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সোমবার এবং বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখতেন।বেলা দ্বিপ্রহরের এক ঘন্টা পূর্বের সময় পর্যন্ত নফল রোজার নিয়ত করার নিয়ম আছে।যদি কেউ নফল রোজা শুরু করে তাহলে সেটি সম্পূর্ণ করা তার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়ে।তাই নফল রোজার নিয়ত করার পর সেই রোজা ভাঙলে ওই নফল রোজার কাযা রোজা আদায় করতে হবে।

যদি কোন স্ত্রী নফল রোজা আদায় করতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে নফল রোজা আদায় করতে হবে।স্ত্রীর নফল রোজা অবস্থায় যদি স্বামী রোজা ভাঙতে বলে তাহলে স্ত্রীকে নফল রোজা ভেঙে ফেলতে হবে এবং পরবর্তীতে সেটি কাযা করে নিতে হবে।

আরো পড়ুন : শবে মেরাজ ও শবে বরাতের আমল যেনে নিন

নফল রোজাদার ব্যক্তির বাড়িতে কোন মেহমান আসলে, সেই মেহমান একা খাবার খেতে মনে কষ্ট পেলে তাহলে এই খাতিরে মেজবান অর্থাৎ বাড়িওয়ালা নফল রোজা ভেঙে ফেলতে পারে।তবে মনে রাখতে হবে রোজা ভাঙার অনুমতি সূর্য ঢলার সময় পর্যন্ত।

ইফতার এর মাসায়েল

সূর্য অস্তমিত হওয়ার পরপরই বিলম্ব না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইফতার করা মুস্তাহাব।বিলম্বে ইফতার করলে তা মাকরুহ।যদি দিনের বেলায় মেঘ হয় তাহলে বিলম্বে ইফতার করা ভালো।মেঘের দিনে ঈমানদার বান্দাদের অন্তরের সূর্য অস্ত গিয়েছে বলে স্বাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত ছবর করা ভালো।শুধুমাত্র আজান অথবা ঘড়ির উপর নির্ভর করা ঠিক নয়,কারণ তাতে ভুলও হতে পারে।

আরো পড়ুন : নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি যেনে নিন

সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে মনে কোন প্রকার সন্দেহ থাকা পর্যন্ত ইফতার করা সঠিক নয়।ইফতারের সময় সবচেয়ে উত্তম হলো খোররাম অর্থাৎ খেজুর দ্বারা ইফতার করা, তারপর কোন মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া এবং তারপর পানি পান করা।লবন দ্বারা ইফতার শুরু করা উত্তম-এটি একটি ভুল আকিদা।এবং ইফতার শুরু করার পূর্বে ইফতারের দোয়া পাঠ করা।ইফতারের দোয়া পাঠ করা মুস্তাহাব।

ইফতারের নিয়ত

রমজান মাসে রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য ফরজ কাজ।রমজান মাসে মহান আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন।এজন্য রমজান মাসকে রহমতের মাস বলা হয়।রমজান মাসে কবরের আজাব কমে যায়।আল্লাহ তার বান্দাদের রিজিক বাড়িয়ে দেন।রমজান মাসে রোজা রেখে ইফতারের সময় রোজা সম্পন্ন করার পূর্বে আল্লাহর বান্দারা যদি নিয়ত করে নিজের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করে।তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করে।

ইফতারের দোয়া

রোজার-নিয়ত-বাংলায়





     



ইফতারের আগে দোয়া কবুল হাদিস

ইফতারের সময় শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ইফতার করা সুন্নাত।রোজাদারদের জন্য ইফতার করার সঠিক নিয়ম হলো-সূর্য অস্ত শেষ হতে হবে এবং রাতের শুরু হতে হবে।মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন “আর পানাহার করো যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়।অতঃপর রোজা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত।”-সহিহ হাদিস-সূরা বাক্বারাহ,১৮৭।

আরো পড়ুন : পুরুষ ও মহিলার নামাজ এর পার্থক্য

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, একদা হযরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “মানুষ ততদিন পর্যন্ত কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন পর্যন্ত তারা অবিলম্বে ইফতার করবে”।(সহীহ বুখারী শরীফ,হাদীস নং: ১৮৫৬); ( সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নং:১০৯৮)

এছাড়াও হযরত মুহাম্মদ (সা.) আরও বলেছেন  যে,৩ ব্যাক্তির দোয়া কখনো  ফিরিয়ে দেওয়া হয় না ।যখন কোন রোজাদার ব্যাক্তি ইফতার করে এবং ন্যায় পরায়ন শাষক ্ও নির্যাতিত ব্যাক্তির দোয়া।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url